ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

টেকনাফে ইউপি সদস্যকে আটক করতে গিয়ে অবরুদ্ধ ডিবি পুলিশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::image-80235-1495204236

কক্সবাজারের টেকনাফে এক ইউপি সদস্যকে আটক করতে গিয়ে স্থানীয় জনতার হাতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় তাদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করা হয়। এতে দুই এএসআইসহ ৪ পুলিশ সদস্য ও গাড়ী চালক আহত হন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে টেকনাফের সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় একজনকে আটক করে টেকনাফ থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে গোয়েন্দা পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুমনের নেতৃত্বে একটি টিম ইয়াবা পাচারের সংবাদে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়া এলাকার ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়ী ঘেড়াও করে। এ সময় এনামুল হককে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সংবাদটি জানতে পেরে স্থানীয় কয়েক শত নারী পুরুষ এগিয়ে এসে ঘেড়াও করে ডিবির মাইক্রোবাসে হামলা চালায়। এতে ডিবি পুলিশের এএসআই আসাদুজ্জামান, ফিরোজ মিয়া, কনেস্টবল আল আমিন, সুমাইয়া সুলতানা ও গাড়ী চালক বাপ্পি আহত হয় বলে জানায়।

পরে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনর্চাজ ওসি মাইন উদ্দীন খানের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকটি টিম উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং ভাংচুরকৃত গাড়ীসহ ডিবি সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। এ সময় নাজিরপাড়া এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে শামসুল আলমকে আটক করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় এসআই সুমন মিয়া বাদী হয়ে শামসুল আলমকে প্রধান আসামী করে ৯ জনকে জ্ঞাত ও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় সংশ্লিষ্ট ধারায় একটি মামলা দায়েক করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুমন মিয়া জানান, রাতে গোপন সংবাদে ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়ী ঘেড়াও করলে তাকে আটিক করে নিয়ে যাওয়া হচেছ এমন সংবাদে শত শত উশৃংখল নারী পুরুষ ইট পাটকেল ও লাঠি নিয়ে আমাদের উপর হামলা চালায় এবং গাড়ী ভাংচুর করে। এ ঘটনায় গাড়ী চালক ও ডিবি পুলিশসহ ৫ জন আহত হয়। এ ঘটনায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে ডিবি পুলিশের ঘটনায় আটক টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়া এলাকার আব্দুল হাকিমের ছেলে শামসুল আলমকে আদালতে সোপর্দ করা হয় বলে জানায় টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাঈন উদ্দিন খান। তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে মামলার আসামীদের আটকে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাদা পোশাকধারী কক্সবাজার জেলা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে একটি দল বৃহস্পতিবার রাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য এনামুল হকের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় তারা কোন কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। তবে চলে আসার সময় ইউপি সদস্য এনামুল হকের হাতে হাতকড়া পড়ানো অবস্থায় দেখে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ইউপি সদস্য এনামকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে ডিবি পুলিশকে অবরুদ্ধে করে রাখে জনতা। এসময় বিক্ষুদ্ধরা একপর্যায়ে ডিবি পুলিশের ওপর চড়াও হন। ফলে চাপের মুখে পড়ে এনামকে ছেড়ে দেন। তবে ডিবি পুলিশের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করে কে বা কারা ভেঙে দেয়। ঘটনার খবর পেয়ে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ ও টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় ডিবি পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ইউপি সদস্য এনামুল হক জানান, গত ইউপি নিবার্চনের কারাগার থেকে আমি বিপুল ভোটে ইউপি সদস্য নিবার্চিত হয়। দীর্ঘ ২২ মাস কারাভোগ শেষে কিছু দিন আগে জামিনে বের হয়ে আসি। তবে কি কারণে ডিবি পুলিশ মাদকের নাম দিয়ে বাড়িতে ডুকে কোন কথা ছাড়াই আমার হাতে হাতকড়া পড়ায় সেটা আমি জানি না।

তিনি বলেন, ওই সময় এসআই সুমন মিয়া অন্য সদস্যদের বলেন, গাড়ি থেকে ইয়াবা গুলো নিয়ে আসতে বলে।  তারা আমাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানো চেষ্টা করেছিল। আমাকে আটকের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ালে জনতার বাধার মুখে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ডিবি পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাকে আটক করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। এসময় আমার কি অপরাধ জানতে চাই। তখন তারা বললো তোমাকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডাকছেন। এই বলে আমাকে হাতকড়া পড়িয়ে যাবার সময় স্থানীয় জনতা বাধা প্রদান করে। এরপর বিক্ষুদ্ধ জনতার মুখে পড়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার প্রতিপক্ষ লোকজন ডিবি পুলিশের মাইক্রোবাসটি ভাংচুর করে ভেঙে দিয়েছেন বলে তার দাবী। এছাড়াও ডিবি পুলিশ আমাদের এলাকার আবদুর রহমান, ইমান হোসেন ও সালেহ আহমেদসহ বেশ কয়েকজন যুবককে ধরে নিয়ে মোট অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন বলে জানান এই জনপ্রতিনিধি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবী করেন।

তবে স্থানীয়রা জানায়, নাজির পাড়া এলাকার নুরুল হক ভুট্টো, তার বাগিনা কামাল, আবছার, হেলালসহ তার বাহিনীর লোকজন এলাকায় ক্রাস সৃষ্টি করে যাচেছ। তবে গোয়েন্দা পুলিশকে ব্যবহার করে ভুট্টো ও তার বাহিনী ইউপি সদস্য এনামুল হককে রোষানলে ফেলার চেষ্টা করেছে। এছাড়া গত এক বছর আগে কক্সবাজার ৬ সাংবাদিককে হামলা চালায় সেই ভুট্রো ও তার বাহিনী। এত কিছুর পরও সে এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে ডিবি পুলিশ মনে করছে, দু’গ্রুপের মধ্যে বিরোধ থাকলেও হামলার ঘটনায় দু’পক্ষের লোকজন জড়িত রয়েছে। তাই এ মামলায় দু’বাহিনীর প্রধানকেও আসামী করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: